
পরিবেশ উপযোগী নয় এমন গাছে ভরে আছে রাজধানী। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বনসাই, চায়নিজ টগরসহ বিভিন্ন ধরনের দামি বিদেশি গাছ লাগানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার তা দিন দিন কমছেো বলে মনে করেন তারা।
মঙ্গলবার (৭ মে) প্রাকৃতিক অক্সিজেন রক্ষা দিবস উপলক্ষে সারাদেশে নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ ও প্রাকৃতিক অক্সিজেন সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের নিচে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব বলেন।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও গ্রিন ভয়েসের উপদেষ্টা ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বৈশ্বিক বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটছে, এই পরিবর্তনের হাওয়া বাংলাদেশের ওপরও লেগেছে। তিন সপ্তাহ সারাদেশের ওপর চলমান তীব্র তাপমাত্রা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, প্রকৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে, গাছপালা কেটে ফেললে, জলাধার ধ্বংস করলে প্রকৃতি কীভাবে প্রতিশোধ নেয়।’
এই পরিবেশবিদ বলেন, ‘আজ থেকে ২৫ বছর আগে ঢাকার মোট আয়তনের ১৭-২০ ভাগ বৃক্ষ ছিল, তা বিভিন্ন সময় বৃক্ষরোপণের নামে কেটে ফেলা হয়েছে। যার দরুণ আজকের এই তীব্র তাপদাহ। এই তাবদাহ থেকে বাঁচতে হলে বৃক্ষরোপণ এবং পরিচর্যার বিকল্প নাই। প্রকৃতি না বাঁচালে আমাদের অস্তিত্বও সংকটে পড়তে হবে।’
প্রকৃতি নিধনের প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রিন ভয়েসের উপদেষ্টা শুভ কিবরিয়া বলেন, ‘দেশে প্রকৃতিকে ধ্বংশ করে উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়। দেশের উন্নয়নের নেপথ্যের গলদ প্রকৃতিকে বিপদে ফেলছে। কিছু দিন আগে দেশে তাবদাহ চলেছে। সেখানে লক্ষ করা গিয়েছে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা। যে গাছ আমাদের নিঃশ্বাস দিচ্ছে সেই গাছকেই আমরা ধ্বংস করছি। বর্তমানে আমাদের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে হবে।’
গ্রিন ভয়েস সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবীর বলেন, ‘২০২১ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে দোকান ও স্থাপনা গড়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাছ লাগিয়ে বলেছিলেন, গাছ না লাগালে, সুন্দরবনের পরিচর্যা না করলে বাংলাদেশ টিকবে না। কিন্তু সরকার আজ উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে গিয়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছে। ঢাকায় যেখানে ২৫ ভাগ বনায়ন থাকার দরকার সেখানে ৭ থেকে ৮ ভাগ রয়েছে। সেটাও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ার মাধ্যমে নিধন করার পাঁয়তারা চলছে।’
আরও পড়ুনঃ লোডশেডিং নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চুন্নু
বক্তারা আরও বলেন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার তা দিন দিন কমছে। সাম্প্রতিকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে, যার কারণে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক বনায়ন চুক্তিতে সারাদেশে লাগানো গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে, যা বন্ধ না হলে দেশের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুন্দরবন বাঁচানোর অনুরোধ জানিয়ে বক্তারা বলেন, গত শনিবার থেকে সুন্দরবনের আগুন এখনো জ্বলছে। সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে গত প্রায় দুই দশকে ২৩ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরবন আমাদের বাঁচায় আসুন আমরা সুন্দরবন বাঁচাই। সুন্দরবন হলো বাংলাদেশের প্রাণ। এ বন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব থেকে আমাদের উপকূলকে রক্ষা করে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ আমাদের এই সুন্দরবন। সুন্দরবন বাংলাদেশের অক্সিজেন ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। দক্ষিণাঞ্চলকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। কিন্তু নানা কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবন এখন আর আগের মতো ভালো নেই।