
মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ পায়রা বন্দরের উন্নয়নের নামে তিনটি বড় প্রকল্পে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া প্রকল্পগুলোর পরও কাঙ্ক্ষিত মানের উন্নয়ন হয়নি, বরং নিম্নমানের কাজ, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এবং অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। এতে করে বন্দর পরিচালনায় তৈরি হয়েছে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা।
বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্প ব্যয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও কাঙ্ক্ষিত গভীরতা অর্জিত না হওয়ায় বন্দর কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনটি প্রধান প্রকল্প হলো— ক্যাপিটাল অ্যান্ড মেনটেইনেন্স ড্রেজিং স্কিম, পায়রা পোর্ট ফার্স্ট টার্মিনাল অ্যান্ড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট, এবং ডেভেলপমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড সাপোর্ট ফ্যাসিলিটিজ।
ড্রেজিং প্রকল্পে ৬,৫০০ কোটি টাকার কাজের মধ্যে মাত্র ৭০ কিলোমিটার ড্রেজিং হয়েছে, যা নির্ধারিত ৭৫ কিলোমিটারের চেয়েও কম এবং কাঙ্ক্ষিত ৯.৩ মিটার গভীরতায় পৌঁছায়নি। অথচ পুরো অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকার কাজ না করেই অর্থ তোলা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের নাব্যতা ৬ মিটারও নয়।
পায়রা পোর্ট ফার্স্ট টার্মিনাল প্রকল্পে স্টিল পাইলিং বাদ দিয়ে কংক্রিট পাইল ব্যবহারের মাধ্যমে শত কোটি টাকার লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত মানের বালুর পরিবর্তে লোকাল বালু ব্যবহার, এবং নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই টার্মিনালের বাউন্ডারি দেয়াল ধসে পড়ায় প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান চলছে।
এছাড়া প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে। অথচ বাস্তবে কাজের অগ্রগতি খুবই কম। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাদেব টেকনোলজি লিমিটেড ও কর্ণফুলী শিপইয়ার্ডের কার্যক্রম নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য পায়রা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও প্রশাসন সদস্য পরিমল চন্দ্র বসুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ রাজশাহী কলেজে শহীদ রায়হান আলীর নামে নামকরণে বিকৃতি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর উদ্বোধন হয়। ২০১৬ সালে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০১৯ সালে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমে প্রবেশ করে। বন্দরের মাধ্যমে কয়লা, নির্মাণসামগ্রীসহ নানা পণ্য আমদানি-রপ্তানি হলেও কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি ও ব্যর্থতা।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি তদন্ত করে দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় না আনা হলে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দরটি ভবিষ্যতে অচল হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।