
জায়েদ মাহমুদ রিজন নালিতাবাড়ি প্রতিনিধিঃ ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা জেলা শেরপুরের তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে শেরপুর–২ আসন। নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে যারা এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা কেউ হুইপ, কেউ মন্ত্রী কিংবা সংসদ উপনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাহাড়, নদী আর পর্যটন সমৃদ্ধ এই আসনের গুরুত্বে তাই রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাখছে গভীর হিসেব–নিকেশ।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে শেরপুর–২ আসনেও জমে উঠেছে রাজনৈতিক উত্তাপ। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকায় ছোট-বড় দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মাঠে চলছে কৌশলযুদ্ধ ও ভোটের লড়াই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন–পুরাতন মিলিয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন আটজন। জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে একজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে। এনসিপি থেকে দুইজন, ইসলামী আন্দোলন থেকে একজন, এবি পার্টি থেকে একজন, গণঅধিকার পরিষদ থেকে একজন ও খেলাফত মজলিস থেকেও একজন প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্থানীয়দের ধারণা, শেষ পর্যন্ত মূল লড়াই হতে পারে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। তবে তিন থেকে চারজন প্রার্থী মাঠে থাকতে পারেন। বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও তারা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। অন্যদিকে জামায়াতও ভোটের মাঠে নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে তৃণমূলে ব্যস্ত সময় পার করছে।
২০০৮ সালের পর থেকে এ আসন ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। এবার দলটি নির্বাচনে না থাকায় অন্যান্য দলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে সুযোগের জানালা।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন—শেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী। তিনি সাবেক হুইপ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মরহুম জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন এবং এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় আরও রয়েছেন জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুর রহমান তারা, যিনি শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও জাপান প্রবাসী দুলাল চৌধুরীও আলোচনায় আছেন; তিনি দীর্ঘদিন বিএনপি নেতাকর্মীদের সহায়তা করে আসছেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ–আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইলিয়াস খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ–সভাপতি আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একে.এম. মোখলেছুর রহমান রিপন, এডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বাবু এবং ছাত্রনেতা সিরাজুল ইসলাম মানিকও ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তৎপর। সবাই তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচি প্রচারে তৃণমূলে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ সাজিদ হত্যা ইস্যুতে স্পর্শকাতর মন্তব্য, দুই শিক্ষার্থীকে শোকজ ইবি প্রশাসনের
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে শেরপুর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়া (ভিপি)। কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক বিতর্ক সম্পাদক ও একাধিকবার কারাবরণকারী এই তরুণ নেতা ইতোমধ্যে ভোটারদের কাছে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। দীর্ঘদিন পর এবার দাড়িপাল্লার প্রতীকে ভোট আশা করছে জামায়াত।
এছাড়া এনসিপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর কবির মিথুন ও শ্রমিক উইংয়ের যুগ্ম সমন্বয়কারী তৌহিদুল ইসলাম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ–সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আল কায়েস, এবি পার্টি থেকে মাওলানা আব্দুল্লাহ বাদশা, গণঅধিকার পরিষদ থেকে কাজী হায়াত এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা মোখলেছুর রহমান মনোনয়নের দৌড়ে আছেন।
সব মিলিয়ে শেরপুর–২ আসনে এখন সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ, মিছিল–সমাবেশ আর জনসংযোগে জমে উঠেছে নির্বাচনী উত্তাপ। ভোটাররাও এখন অপেক্ষায়—কে হতে যাচ্ছেন সীমান্তঘেঁষা এই গুরুত্বপূর্ণ আসনের নতুন জনপ্রতিনিধি।



