মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী শহরের নিউ মার্কেটে ছোট একটি দোকানে প্রতিদিন সেলাইয়ের কাজ করেন মোঃ সাইফুল ইসলাম। ৭৯ বছর বয়সী এই প্রবীণ ব্যক্তি জীবনকে এক নতুন গতিতে বাঁচতে ভালোবাসেন। বয়স তার জন্য কখনো বাধা হয়নি; বরং এটি তার পরিশ্রমের প্রতি আবেগ এবং জীবনের প্রতি তার অসীম ভালোবাসার সাক্ষী। দোকানের সামনের দরজায় বসে যখন তিনি সেলাই মেশিনে কাজ করেন, তখন মনে হয় যেন সময় থমকে গেছে। তাঁর হাতের কাজগুলো প্রতিটি পোশাকের মধ্যে রূপায়িত করে তার জীবনের গল্প।
মোঃ সাইফুল ইসলাম এর জীবনের শুরুটা ছিল সেলাইয়ের সুতোয় বাঁধা। স্বাধীনতার আগে নিউমার্কেটের হাসান টেইলার্সে কাজ শুরু করেন তিনি। এখানেই ছিল তার হাতেখড়ি, এবং সেখান থেকেই শুরু হয় সেলাইয়ের প্রতি তার গভীর প্রেম। ছোট ভাইয়ের অনুরোধে তিনি লাইফ টেইলার্সে কাজ শুরু করেন। দোকানটি ছিল তার ছোট ভাইয়ের। যখন ছোট ভাই নিউ মার্কেট এলাকায় চলে যান, তখন সাইফুলের হাতে আসে সেই দোকান। আজও তিনি সেই দোকানের পত্তনকারী।
বয়সের ভারে শরীর কিছুটা দুর্বল হলেও, তাঁর মন আজও চঞ্চল। তিনি কখনোই কারো বোঝা হতে চান না—এটাই তার জীবনের মূল মন্ত্র। সন্তানরা বারবার তাকে বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলে, কিন্তু সাইফুলের কাছে বিশ্রাম মানেই অলসতা। তিনি বিশ্বাস করেন, অলস বসে থাকলে এক সময় তা তার শরীর ও মনকে দুর্বল করে ফেলবে।
ছোটবেলা থেকেই সাইফুল ছিলেন স্বপ্নবাজ। নিউমার্কেট এলাকার হাসান টেইলার্সে কাজ করার সময় থেকেই তার মনে ছিল স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছা। এই ইচ্ছা তাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে। সাইফুলের কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং নিজের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার তাকে জীবনের কঠিন সময়গুলোতে শক্তিশালী করে রেখেছে।
তিনি বলেন, যদি আমি কাজ না করি, তবে অলসতা এসে আমার মনের শাণিত ধারকে কেটে ফেলবে। যে সক্রিয়তা, কর্মস্পৃহা আমার মনের আকাশকে প্রতিদিন উজ্জ্বল রাখে, তা যেন ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমি চাই, আমি নিজে আয় করে আমার প্রয়োজন পূরণ করি।
আরও পড়ুনঃ বিএনপির নেতা ডা.শাহাদাতকে চসিক মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি
মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে-মেয়েরা আমাকে অনেকবার বলেছে— ‘আব্বা, আর কাজ করবা না। এই বয়সে বিশ্রাম করবা’। কিন্তু আমি পারি না। অলস বসে থাকলে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো। কাজ না করলে তো নিজেকে বোঝা মনে হবে। আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
‘দোকানটি শুধু আমার জীবিকার মাধ্যম নয়, বরং এটি আমার কাছে আত্মসম্মানের। গ্রাহকরা যখন আমার কাছে আসেন, তারা শুধু সেলাই করা পোশাকই পান না, বরং পান আমার হাতের স্পর্শে বোনা ভালোবাসা। প্রতিটি সেলাইয়ের মধ্যে মিশে আছে একান্ত যত্ন। এই যত্ন আমাকে স্বতন্ত্র করে তোলে। আমার দক্ষতা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলস্বরূপ, গ্রাহকরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে’- বলছিলেন সাইফুল।
এখনো সেলাইয়ের কাজ করতে তার ভালো লাগে। সাইফুলের কাছে এটি শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, বরং একটি আবেগ।
তিনি বলেন, কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। যতদিন পারবো, ততদিনই করে যাবো। আমি তো নিজে আয় করে নিজের চাহিদা মেটাই, তাই কারও সাহায্যের প্রয়োজন হয় না।