spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদবিশেষ প্রতিবেদনজুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণবিপ্লব এর ফসল

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণবিপ্লব এর ফসল

বাংলাদেশের একটি শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে জাতীয় গণবিপ্লবে—যার সরণে আগামী ৫ আগস্ট থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা (৩০%) পুনঃস্বীকৃতি পেয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর এক সেন্ট্রাল লাইব্রারি থেকে শুরু হওয়া অচল আন্দোলন পরিণত হয় জাতীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বানে।

আন্দোলনের আকারঃ
৫–১৬ জুলাই ক্যাম্পাস পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু হয়। ১৬–১৭ জুলাই পুলিশের পোস্ট চেপে অস্ত্রবিরোধী প্রতিরোধ হয়; রংপুরের আবু সাঈদ পুলিশের শটগানের কারনে প্রাণ হারান। ১৭–১৯ জুলাই রাজধানী ও অন্যান্য শহরে ‘কফিন মিছিল ও লাঠি–বন্দুকের সংঘর্ষ’ চলে; পুলিশ সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের উপরে গুলি চালায়।

গণহত্যার সেরা মাত্রা
১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সংঘটিত লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, গুলি ও গ্রেনেড হামলায় নিহতের সংখ্যা ১,০০০–১,৪০০+, আহত ২০,০০০+; বহু শিক্ষার্থী অন্ধত্বে ভোগে

ইউক্রাইন ও জাতিসংঘের তদন্তে প্রমাণিত হয়, সরকারি বাহিনী শ্রমিক ও নিরাপদ মানুষের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে।

চাইলে শহীদ আবু সাঈদের মতো ব্যাক্তি কেন্দ্রীয় প্রতীক হয়ে উঠে—তার মর্মান্তিক হত্যার ভিডিও দেশে-বিদেশে প্রতিক্রিয়া তোলার কারণ হয়।

চানখারপুল গণহত্যা (৫ আগস্ট)
ঢাকার চানখারপুলে একটি দীর্ঘ মিছিল “Long March”–এ পুলিশ ও র‍্যাব হামলায় ৭ জন নিহত, পুলিশ কনস্টেবল সুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শহীদদের মধ্যে ছিল দশম শ্রেণির শাহরিয়ার খান আনাস; তার স্মরণে রাস্তা নামকরণ হয়।

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়াঃ
১৮–২৮ জুলাই প্রায় ১১ দিন মোবাইল ও ইন্টারনেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শুট-অ্যাট-সাইট কারফিউ-র ফলে জনজীবন অবরুদ্ধ ও গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১,০০০+; আহত অন্তত ২০,০০০+।

ছাত্র-জনতার ভূমিকাঃ
আন্দোলনের মুখ্য নেতারা—নাহিদ ইসলাম, নুসরাত তবস্সুম, আবু সাঈদ প্রমুখ—আঁধারিত অবস্থার মধ্যেও একজন অনির্ভরযোগ্য প্রতীক হিসেবে গণমাধ্যমে ওঠে।

নাহিদ ইসলাম গ্রেফতার ও নির্যাতিত হলেও আন্দোলনের গতি থামেনি।

স্বৈরাচার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারঃ
৫ আগস্ট অবরোধের মধ্যে দেশজুড়ে পরিচ্ছন্ন অবস্থা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন, ভারতের উদ্দেশে দেশছাড়া হন।

সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ পায়, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রিন্সিপাল অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে নির্বাচন, মানবাধিকার অপসারণ ও গণতান্ত্রিক স্বাভাবিকতা প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে ধারাবাহিক রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলার ডুবি, সাত জেলে জীবিত উদ্ধার

তদন্ত-ন্যায়বিচারঃ
ইউনিসেফ ও জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিস ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন চালায়—ঘটনার সত্যতা ও দায়ী সিনিয়রদের নামে আইনি পদক্ষেপ চালু হয়।

সামগ্রিক শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ শুধু কোটা আন্দোলন না—এটি ছিল:

  • স্বৈরাচার বিরোধী গণসংগ্রাম: তরুণ-জনতার ঐক্য প্রমাণ করে, গণতন্ত্রই সবার প্রাপ্য।
  • জননেতৃত্বে গণতন্ত্র: নাহিদ, নুসরাতদের মতো রক্তাক্ত শহীদ ও আহতদের নাম একটি নতুন রাজনীতির প্রতীকি করে তোলে।
  • বিকল্প গড়ার প্রেরণা: ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার—গণতন্ত্রীয় পুনর্গঠন ও সংবিধান সংস্কারের পথে যাত্রা শুরু করে।

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এটি ইতিহাসে এক তরুণ সমাজের সাহসিকতার প্রতীক, যেখানে অন্ধকার ভেঙে উঠে মুক্তিযুদ্ধের পুরাতন চেতনার অনুপ্রেরণার আলো। যতই সংকট থাকুক না কেন, জনগণের ঐক্য ও তরুণদের নেতৃত্বেই গড়ে ওঠে একটি নতুন, শক্তিশালী গণতন্ত্র।