spot_img

― Advertisement ―

spot_img

উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন বেরোবি শিক্ষার্থীরা

বেরোবি প্রতিনিধি: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন করা শিক্ষার্থীরা অবশেষে উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন।বুধবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের বেগম...
প্রচ্ছদখেলাধুলাফুটবলযে কারনে হারলো বাংলাদেশ, সমাধান না এলে উন্নতির স্বপ্ন থাকছে কেবল কাগজে-কলমেই

যে কারনে হারলো বাংলাদেশ, সমাধান না এলে উন্নতির স্বপ্ন থাকছে কেবল কাগজে-কলমেই

স্পোর্টস ডেস্কঃ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ২-১ গোলে হারলো বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে এমন হারের পর হতাশা যেমন ছড়িয়েছে, তেমনি জন্ম নিয়েছে প্রশ্ন! এই হার কি কেবল প্রতিপক্ষের শ্রেষ্ঠত্বের ফল, নাকি নিজেদের কৌশলগত দুর্বলতার নির্মম প্রতিচ্ছবি?

প্রথম দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ম্যাচে কিছু দুর্ভাগ্যজনিত ঘটনা কিংবা সিঙ্গাপুরের গেমপ্ল্যান পার্থক্য গড়েছে। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে স্পষ্ট হয়, এই হারের পেছনে বড় কারণ বাংলাদেশের নিজেদের ভুল সিদ্ধান্ত ও ট্যাকটিক্যাল দুর্বলতা।

অসম্পূর্ণ প্রেসিং ও বিচ্ছিন্ন মিডফিল্ড

ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশ হাই প্রেসিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে চেয়েছিল। তবে এই প্রেসিং ছিল অসংগতিপূর্ণ ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডাররা উপরের লাইনে উঠে গেলেও রক্ষণভাগ সাড়া দেয়নি। ফলে মাঝমাঠে তৈরি হয় বিশাল ফাঁকা অঞ্চল, যেটা সিঙ্গাপুর কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়েছে। প্রথম গোলটি এসেছে এমন এক মুহূর্তে, যখন ডি-বক্সে একাধিক বাংলাদেশি খেলোয়াড় থাকলেও লং থ্রো থেকে সিঙ্গাপুরের স্ট্রাইকার অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেন।

ধীরগতির ট্রানজিশন ও সিদ্ধান্তহীনতা

বল দখলের পর দ্রুত আক্রমণে ওঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দল বারবার দেরি করেছে। বেশ কয়েকবার উইংয়ে জায়গা তৈরি হলেও খেলোয়াড়রা বল ঘুরিয়ে আবার পেছনে নিয়ে গেছেন। ট্রানজিশনের ধীরগতি ও সিদ্ধান্তহীনতা প্রতিপক্ষের রক্ষণকে সময় দিয়েছে নিজেকে সংগঠিত করার। সেইসাথে কাউন্টার অ্যাটাকে গতি না থাকায় আক্রমণের ধারও কমে যায়।

গোলকিপার ও রক্ষণভাগের সমন্বয়হীনতা

দলের তরুণ গোলকিপার মিতুল মারমার দুটি গোলেই তার পজিশনিং ও সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রথম গোলের সময় তিনি সময়মতো বল রিড করতে পারেননি, দ্বিতীয় গোলেও তার বেরিয়ে আসা ও অবস্থান ছিল ভুল। একইসাথে রক্ষণভাগ বিশেষ করে সেন্টার-ব্যাকদের মধ্যেও বোঝাপড়ার অভাব। অভিজ্ঞ সাদ উদ্দিনের নিষ্ক্রিয়তা ও একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তোলে। একজন ফুলব্যাক হিসেবে তার থেকে ওভারল্যাপিং কিংবা আন্ডারল্যাপিং করে দলকে গোল সাহায্য করার দিকটি একেবারেই অনুপস্থিত ছিলো।

আক্রমণে নির্ভরতা ও সেট-পিসে পরিকল্পনার অভাব

বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি সেট-পিসের সুযোগ পেয়েও সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। কর্নার ও ফ্রি-কিক থেকে গোলের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। পুরো আক্রমণ নির্ভর ছিল মূলত রাকিব হোসেনের গতির উপর এবং সামিত সোমের কিছু থ্রু পাসে। কিন্তু এই নির্ভরতা একঘেয়ে হয়ে যাওয়ায় সিঙ্গাপুর সহজেই ডাবল মার্কিং করে রাকিবকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।

দেরিতে পরিবর্তন ও ভুল পজিশনিং

২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও কাবরেরা কার্যকর পরিবর্তন আনতে দেরি করেছেন। একজন প্রকৃত ফিনিশার না থাকায় রাকিবকে কখনো উইং, কখনো ফুলব্যাক হিসেবে খেলানো হয়েছে, যা তার প্রভাব হ্রাস করেছে। এর ফলে আক্রমণে ভারসাম্য হারায় দল। পাশাপাশি খেলোয়াড়দের পজিশনিংয়ে অস্পষ্টতা প্রতিপক্ষকে সুবিধা এনে দিয়েছে।

মানসিক চাপ ও নেতিবাচক বডি ল্যাঙ্গুয়েজ

ঘরের মাঠে জয় ছাড়া বিকল্প ছিল না এই মানসিক চাপ স্পষ্টভাবে খেলোয়াড়দের প্রভাবিত করেছে। প্রথম গোল হজমের পর থেকেই কিছু খেলোয়াড়ের চোখে-মুখে হতাশা ও অনাস্থার ছাপ ফুটে ওঠে। দ্বিতীয়ার্ধে সেই নেতিবাচক বডি ল্যাঙ্গুয়েজ গোটা দলের উপর ছাপ ফেলেছিল। ভুল পাস, অকার্যকর ড্রিবলিং আর পরস্পরের সাথে ভুল বোঝাবুঝি বারবার ছন্দ কেটেছে।

আরও পড়ুনঃ আনচেলত্তির ছোঁয়ায় ব্রাজিলের নবজাগরণ, বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত প্যারাগুয়েকে হারিয়ে

কৌশলের বাস্তবায়নে ঘাটতি

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পরিকল্পনা ছিল, সেটআপ ছিল, কিন্তু তার কার্যকর বাস্তবায়ন ছিল না। ফুটবলে শুধু বোর্ডে আঁকা কৌশল যথেষ্ট নয়, মাঠে তার রূপদানই আসল। খেলোয়াড়দের মধ্যে দায়িত্ববোধ, বোঝাপড়া, এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতার ঘাটতি ছিল প্রকট। কাগজে-কলমে স্বপ্ন থাকলেও মাঠে তার প্রতিফলন না ঘটলে উন্নতি শুধুই অলীক কল্পনা হয়ে থাকে।

এখনই দরকার গঠনমূলক সমাধান

এই হার শুধু পয়েন্ট হারানোই নয় এটি বাংলাদেশের ট্যাকটিক্যাল দৈন্যতার নিরিখ। পরের ম্যাচগুলোতে টিকে থাকতে হলে পরিকল্পনা, মানসিকতা এবং বাস্তবায়নের জায়গাগুলোয় আমূল পরিবর্তন দরকার। প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, কিন্তু তাদের দক্ষতা ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় ট্যাকটিক্যাল কাঠামো না থাকলে ভবিষ্যতের জন্যও শঙ্কা থেকেই যাবে।

এডি/ মুহাম্মদ কাইউম