জাবিতে ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপন

148
জাবিতে ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপন
জাবিতে ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপন। ছবিঃ জাবি প্রতিনিধি

আবু বকর সিদ্দিক,জাবি প্রতিনিধিঃ

“Standing on the shoulders of Giants” শিরোনামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আজ ২৪ মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস (World Poetry Day) উদযাপিত হয়েছে।

‘কেবল কয়েক ছত্র কবিতার জন্যে এই বৃক্ষ, জরাজীর্ণ দেয়াল এবং বৃদ্ধের সম্মুখে নতজানু আমি থাকবো কতোকাল? বলো কতোকাল ?”

ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ রেজার তত্ত্বাবধানে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষে ইংরেজি ৫১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা প্রথম পর্যায়ে সম্মিলিত ভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র,নজরুল, জীবনানন্দের বাংলা কবিতার পাশাপাশি ইংরেজী,আসামী,পার্সি,রুশ,ভাষার বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করে। তৃতীয় পর্যায়ে অতিথিদের বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ব কবিতা দিবসের মুল আলোচনা শুরু হয়।

আলোচনার এক পর্যায়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিকার, সাংবাদিক, ও শিক্ষাবিদ ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা আবৃত্তি দিয়ে শুরু করেন। এসময় তিনি বলেন কবিতা আমাদের বাঁচতে শিখায় কবিতা আমাদের স্বপ্ন দেখায়। আগামীর এক সম্ভাবনায় দুয়ারে উষার আলোর মতো পথ দেখায়, কবিতা আমাদের জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে সত্য ও ন্যায়ের পথের সন্ধান প্রদান করে , এরকম সৃষ্টিশীল সুন্দর বর্নীল সাজানো অনুষ্ঠানের ভুয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বেশি বেশি এরকম কালচারাল প্রোগ্রাম আয়োজন করা দরকার। যার ফলে কবি ও কবিতার জন্য অনুপ্রেরণা তৈরি হবে, তরুন প্রজন্ম কবিতার মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে, নতুন সৃষ্টির আগ্রহ থেকে জন্ম নিবে প্রতিবাদী বিপ্লবী শোষিত মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী কবি। যাদের কলমের লিখনীর বিপ্লবের জোয়ারে অশুভ শক্তির পতন ঘটে দিগন্তে নতুন সুর্য উঠবে।’

বিশিষ্ট সমাজসেবী কবি ও ঔপন্যাসিক তালুকদার লাভলী বলেন, ‘কবিতা মানুষকে কথা বলার সৌন্দর্যতা শেখায়, শব্দের বাচনভঙ্গি আবৃত্তির অন্তর্নিহিত ভাব বুঝতে সাহায্য করে। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিকে তোমরা আকড়ে ধরবে, কবিতা পড়বে ও অন্যকে উৎসাহিত করে কবিতার মাহাত্ম্য গভীর অর্থ উপলব্ধির চেষ্টা করবে। তোমরা বিশ্বাস করবে,প্রতিটি মানুষের মাঝে সৃজনশীলতা আছে। যখন কেউ তা প্রকাশ করা শুরু করে তখন থেকে পৃথিবী পরিবর্তিত হতে শুরু করে।তোমাদের মতো সৃষ্টিশীল উদ্দীপ্ত তরুনদের দিকে থাকিয়ে আমাদের সমাজ ও দেশ। তোমরা তোমাদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করবে এবং কবি ও কবিতার বিকাশে আত্মনিয়োগ করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিবে। আমাদের হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি কে আরো সমৃদ্ধ করবে।’

আরও পড়ুনঃ ঢাবিতে বগুড়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল

এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদে ” বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপনে ” বিশিষ্ট কবি ও সমাজ সেবক ফরিদ কবির, শাকিরা পারভিন, সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকগন ও ইংরেজি ৫১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পররবর্তীতে বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য শেষে ইফতার মাহফিল ও নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

                                                                                         "কবি ও কবিতার দর্শন"

সাহিত্যের অনেক শাখা-প্রশাখার সবচেয়ে আদিম যে পর্ব, সেটি হলো কবিতা। সেই কবিতার প্রতি সম্মান জানিয়ে ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৯ সাল থেকে ‘বিশ্ব কবিতা দিবস পালিত হচ্ছে।

ইংলিশদের ওয়ার্ডসওয়ার্থ কিংবা শেক্সপিয়ার, আইরিশদের ইয়েটস, ফ্রেঞ্চদের বদলেয়ার, ইতালির দান্তে, জার্মানির গ্যেটে, পার্সিয়ানদের হাফিজ, উর্দু ভাষার গালিব কিংবা বাঙালির রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ–যার কথাই বলা হোক না কেন, সাহিত্যের সঙ্গে যারা পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, তাদের সিংহভাগই হচ্ছেন কবি।

আবার কবিদের হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে এক একটি জাতির আদি ইতিহাস। সেটা হোক ইলিয়াড, অডেসি, বিউলফ, ইনফার্নো, রামায়ণ, মহাভারত কিংবা মেঘনাদ বধ–এর ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে একেকটি জাতির ইতিহাস, বিশ্বাস, রাজনীতি, দর্শন–সর্বোপরি একটি সামগ্রিক আদর্শ।

আজও চাকরি না পাওয়া কোনো এক বেকার যুবকের মুখে ফুটে ওঠে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সেই অনবদ্য লাইন: ‘বন্ধুরা সব বিত্তে বাড়ে, চিত্তে বাড়ে/বাড়ে শনৈঃ গৃহস্থালি, আমার তবু বয়স হয় না, বুদ্ধি হয় না।’

কিংবা ক্ষুধার্ত পাকস্থলী নিয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হয়তো কেউ বিড়বিড় করে আওড়াচ্ছে রফিক আজাদের কবিতা: ‘চলাচলকারী পথচারী, নিতম্বপ্রধান নারী/উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ি/আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ/ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো। বিপ্লবের মাঠে, মিছিলের মাঝখানে হয়তো কোনো যুবক তার প্রেমিকার কথা মনে করে নীরবে আবৃত্তি করে যাচ্ছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন: ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা, চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।’

এভাবেই বেঁচে থাকুক কবিতার গতিময় পথচলা দিগন্ত থেকে দিগন্তে।