
আবু বকর সিদ্দিক, জাবি প্রতিনিধিঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়(জাবি) বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সচরাচর লোকজনের যাতায়াত বেশি থাকে এই ক্যাম্পাসে। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
কিন্তু জাবির কোনো সড়কপথে নেই পথচারীদের জন্য ফুটপাত। ফলে মূল সড়ক দিয়েই পায়ে হেঁটে ঝুকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে করে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে রাস্তার দুপাশে পানি জমে যাওয়ায় আরও ভোগান্তিতে পরেন পথচারীরা। ফলে বাধ্য হয়েই মূল সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। এতে করে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের জন্য ফুটপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিশাল ক্যাম্পাসে এরকম কোনো সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়নি। অন্যদিকে ক্যাম্পাসে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে রাস্তার দু’ধারে পানি ও কাদা জমে যায়। যার ফলে রাস্তার পাশ দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পথচারীরা বাধ্য হয় রাস্তা মধ্যে দিয়ে চলাচলের। একই রাস্তায় পথচারী, রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বাসের মত বড় যানবাহন একসাথে চলাচল করতে হয়। এতে করে একদিকে যেমন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় অন্যদিকে তেমনি দুর্ঘটনার আশংকা তৈরি হয়।
গত 13 ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গেরুয়া এলাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ফেরার সময় ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বটতলা সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং একটি বেসরকারি হাসাপাতালের ভর্তি হন।
এভাবে গত জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০টি ছোট-বড় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে অটোরিকশার দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলার সামনের সড়কে ব্যাটারিচালিত দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে রিকশা উল্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে।
তাছাড়া লাইসেন্সবিহীন অতিরিক্ত রিকশা চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে জাবির সড়কগুলোতে ফুটপাত নির্মাণ করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলোতে ফুটপাতের স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ফুটপাতহীন সড়কে চলাচল করায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। প্রায়ই এ সমস্যার জন্য অনেক শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। পথচারীদের হাঁটার অসুবিধা হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের অন্যান্য খরচের মধ্যে পরিবহন খরচ একটি বাড়তি খরচ, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কগুলোতে ফুটপাত না থাকায় হেঁটে চলাও দায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও ক্যাম্পাসের এ বেসিক চাহিদা পূরণের কোনো ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।সম্প্রতি জাবিতে ১৪’শ কোটি টাকার মেঘাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, লাইব্রেরি, প্রশাসনিক ভবন সহ নানান অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা হলেও ক্যাম্পাসের চলমান ফুটপাত ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার দিকে কোনো নজর দেওয়া হয়নি।’
আরও পড়ুনঃ জাবির সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির নেতৃত্বে মেহেদী-নুসরাত
প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাস্তা প্রসারণ ও বর্ধিতকরণের কথা বলা হয়েছে। সেই সাথে ফুটপাত ও সাইকেলের জন্যও আলাদা লেন তৈরি করা হবে।’
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো বিনির্মাণ করা হবে। আগামী আগস্ট মাসে আমরা টেন্ডার সার্কুলার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেব। একই সঙ্গে সড়কের পাশে সাইকেল লেনসহ ফুটপাত তৈরি করা হবে। আশা করি এ বছরই এ সমস্যার সমাধান হবে।