
মোঃ মাসুদ রানা মনি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরে এ বছর আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্ধেকেরও কম হয়েছে। উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যা ও টানা বর্ষণের কারণে কৃষকেরা যথাসময়ে ধান রোপণ করতে পারেননি। ফলে তাদের চোখে-মুখে এখন দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে জমিতে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে থাকার কারণে অনেক কৃষক ধান রোপণ করতে পারেননি। যেসব কৃষক কোনোমতে আবাদ করতে পেরেছেন, তাদের অনেককেই একাধিকবার চারা রোপণ করতে হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, লক্ষ্মীপুরে এ বছর ৮৩,২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে মাত্র ৩৫,৭৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এতে ধান এবং গো-খাদ্যের উৎপাদনও অনেক কম হয়েছে।
সদরের ভবানীগঞ্জ, চর রমনী মোহন, টুমচর এবং শাকচর ইউনিয়নে কিছু কৃষক ধান আবাদ করতে পারলেও জেলার অন্যান্য এলাকা, বিশেষ করে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার বেশিরভাগ জমি জলাবদ্ধ থাকার কারণে ফসলি জমি পতিত ছিল।
সদর উপজেলার চররুহিতা গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, “বন্যার কারণে ধানের চারা পচে গেছে। পরে ধার-দেনা করে আবার আবাদ করেছি, কিন্তু ধান ঝলসে গেছে। কোনো সরকারি সহায়তাও পাইনি।”
চরলরেন্স এলাকার কৃষক আবুল কালাম এবং চরকাচিয়া গ্রামের আব্দুল মতিন জানান, “আমরা নিজেদের উদ্যোগে বীজ সংগ্রহ করেছি এবং পরিচর্যার মাধ্যমে কিছুটা ভালো ফলন পেয়েছি।”
আরও পড়ুনঃ যশোরে ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস’ এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে মহিন ও ফাহিম
তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওমর ইবনে হুসাইন বলেন, “বন্যার পানির কারণে অনেক জমি চাষের উপযোগী হয়নি। কৃষকদের জন্য সরকার যে সহায়তা করেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল।”
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামছুদ্দিন ফিরোজ বলেন, “বন্যার কারণে কৃষকদের চাষাবাদে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে সরকারিভাবে বীজ ও ধানের চারা সরবরাহ করা হয়েছিল। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের সহায়তা করেছেন।”
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, “বন্যার পর ব্রি ধান-৭৫ সরবরাহ করা হয়, যা দ্রুত সময়ে ফসল উৎপাদনে সহায়ক হয়েছে। চাষের পরিমাণ কম হলেও যারা আবাদ করতে পেরেছেন, তারা ভালো ফলন পেয়েছেন।”
কৃষকদের দাবি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আগামী মৌসুমে তাদের জন্য আরও কার্যকর সহায়তা ও প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে।