মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর প্রকৃত নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে কিছু সুবিধাভোগী অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহীর ত্যাগী ছাত্রসমাজ এই কমিটিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দ্রুত বাতিলের দাবি জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর জিরো পয়েন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্তি লাভ করেছে। এই আন্দোলনে রাজশাহীর ছাত্র-জনতার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
১০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যায়। এই আন্দোলনের শহীদ, রাজশাহীর দুই কৃতিসন্তান আলী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলনের প্রকৃত নায়কদের বাদ দিয়ে বহিরাগত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী মহানগর’ নামে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তারা দাবি করেন, ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কমিটি গঠন করেছেন। এতে এমন অনেককে রাখা হয়েছে, যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। রাজশাহীর আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকা ব্যক্তিদেরও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে, যা আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী।
এছাড়াও, কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বে একজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিকে রাখা হয়েছে, যা কমিটির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আন্দোলনের আদর্শ বিকৃত করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও তার সহযোগীদের নেতৃত্বে প্রকাশিত এই কমিটি তাৎক্ষণিক বাতিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ‘অবৈধ’ পকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আব্দুল হান্নান মাসুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আরও পড়ুনঃ কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বায়োটেক স্কুলিং অনুষ্ঠিত
রাজশাহীর সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ এই পকেট কমিটিকে সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে এবং মাহিন সরকার ও সালাউদ্দিন আম্মারকে রাজশাহীর মাটিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এই আন্দোলন হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের ফসল, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির প্ল্যাটফর্ম নয়। তারা আন্দোলনের প্রকৃত চেতনা রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এ ধরনের অনৈতিক কমিটি মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী কলেজ বাংলা বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম, রাজশাহী কলেজ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ জুবায়ের রশিদ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বিবিএ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফিউল ইসলাম
শিক্ষার্থীরা জানান, যদি দ্রুত এই কমিটি বাতিল না করা হয়, তাহলে তারা আরও বড় কর্মসূচির ডাক দেবেন।