মো: সাদিত হোসেন, সহকারি স্টাফ রিপোর্টারঃ ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ফেরার পথে ফরিদপুরে চন্দনা কমিউটার ট্রেনের গতিরোধ করলো বিক্ষুব্ধ জনতা। বুধবার (৫ জুন) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ফরিদপুর স্টেশন পার হওয়ার আগেই তারা রেলপথে দাঁড়িয়ে গিয়ে ট্রেনটির গতিরোধ করে।
পরে ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে ৫০ মিনিট পর রাত ৯টা ৩০ মিনিটে অবরোধ মুক্ত করলে ট্রেনটি রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পথে চলাচলকারী চন্দনা কমিউটার ট্রেনটির বুধবার এক মাস পূর্ণ হয়। ট্রেনটি যাতে ফরিদপুর স্টেশনে যাত্রা বিরতি দেয় এ দাবিতে চালুর দিন গত ৫ মে এবং এক সপ্তাহ পর গত ১১ মে ভোরে ফরিদপুর রেলস্টেশনের সামনে ট্রেনের গতি রোধ করে জনতা।
আরও পড়ুনঃ পূর্ব শত্রুতার জেরে ছাত্রলীগ নেতার গুলিতে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত
ফরিদপুরবাসীর দাবির মুখে গত ১৮ মে ভাঙ্গায় রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আর আন্দোলন করতে হবে না ফরিদপুর স্টেশনে থামবে চন্দনা কমিউটার ট্রেন। এরপরও ট্রেনটি থামছে না।
মন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর ১৮ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও ট্রেন থামার ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ওই ট্রেনটি চালুর একমাস পূর্তিতে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আন্দোনকারীরা।
চন্দনা কমিউটার ট্রেন প্রতিদিন সকাল ৫টায় রাজবাড়ি রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এটি ফরিদপুরে কোনো যাত্রাবিরতি না দিয়ে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভাঙ্গা পৌঁছায়। ট্রেনটি সেখানে এক ঘণ্টা যাত্রা বিরতি দিয়ে সকাল ৭টা ১৫ তে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ভাঙ্গা থেকে ঢাকার পথে ওই ট্রেনের নামকরণ হয় ভাঙ্গা কমিউটার ট্রেন হিসেবে।
এটি ঢাকায় পোঁছালে সকাল ৯টায়। একই ট্রেন সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রওনা হয়ে ভাঙ্গা স্টেশনে পৌছায় রাত ৮টায়। ভাঙ্গায় ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে ৮টা ১০ এ চন্দনা কমিউটার নামে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে রাওনা দিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় রাজবাড়ী রেলস্টেশনে গিয়ে পৌছায়।
ট্রেন আটকানোর পর জনতা ফরিদপুরে যাত্রা বিরতির দাবিতে স্লোগন দিতে থাকে। পরে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ সময় ওসি ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সাথে ওসির বাদানুবাদ হয়।
আন্দোলনকারী পক্ষে মহুয়া ইসলাম বলেন, রেলমন্ত্রী বলেছেন ট্রেন থামবে। তারপর ১৮ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তিনি (মন্ত্রী) এ দপ্তরের প্রধান। তারপরও ট্রেন ফরিদপুরে থামছে না কার ইশারায়।
আরেক আন্দোলনকারী আবরাব নাদিম বলেন, ট্রেন ফরিদপুরে থামতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তদরে চিঠি দিয়েছি। মেইলও করেছি। তারপরও কেন ট্রেন থামছে না। ট্রেন না থামা পর্যন্ত প্রয়োজন হলে প্রতিদিন রাতে আমরা আন্দোলন করে ট্রেন থামাবো।
আন্দোলনকারীদের ওসি মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ট্রেন থামা না থামার বিষয়টি আমার দেখার বিষয় না। তবে মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা আমি পত্রিকায় পড়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমি এখানে এসেছি তবে আমি চাই ট্রেনটি যাত্রা বিরতি দিক ফরিদপুরে।
ফরিদপুরের স্টেশন মাস্টার তাকদির হোসেন বলেন, প্রতিদিনের এ যন্ত্রণা থেকে আমি মুক্তি চাই। আমি চাই ট্রেন থামুক। কিন্তু আমি ইচ্ছে করলেই তো ট্রেন থামাতে পারি না। এ সংক্রান্ত এটি নির্দেনার আপেক্ষায় আছি। বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ জানে ।
প্রসঙ্গত, এর আগে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ ট্রেন থামানোর অনুরোধ জানিয়ে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে চিঠি দেন। ফরিদপুরের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ঝর্না হাসান রেলমন্ত্রীকে ফোন করে ফরিদপুরে ট্রেনটির যাত্রা বিরতি দেওয়ার জন্য দাবি জানান।