
মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। অনেকের ক্ষেত্রে প্রধান উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ একপ্রকার বিলাসিতা ও অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত হলো ব্যতিক্রমী এক চ্যারিটি ইভেন্ট— “১০ টাকায় পুজোর বাজার”।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের জামালখান এক্সক্লুসিভ কনভেনশন হলে এ বাজারের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন নিম্ন আয়ের এলাকা থেকে সহস্রাধিক শিশু, নারী ও বৃদ্ধ অংশগ্রহণ করেন। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে তারা পরিবারের জন্য নতুন কাপড়সহ প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই করেন। অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে ফ্রি বাস সার্ভিসের ব্যবস্থাও ছিল। এছাড়াও আয়োজন করা হয় বিনোদন ও মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাল, ডাল, তেল, চিনি, ডিম, সুজি, নারকেলসহ ২৬ প্রকার পণ্যে সজ্জিত ছিল একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপারশপ। যেখানে ৫০ পয়সায় ১ কেজি চাল, ১ টাকায় শার্ট, ৪ টাকায় শাড়ি কিংবা ৩ টাকায় লুঙ্গি পাওয়া গেছে। এভাবে মাত্র ১০ টাকায় প্রতিটি পরিবার প্রায় ১ হাজার টাকার বেশি পণ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে। বিক্রেতার দায়িত্ব পালন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ওমেন ইউনিভার্সিটি, বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক।
আরও পড়ুনঃ নালিতাবাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন: প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি সাবেক সভাপতির
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো ধর্মীয় সম্প্রীতি। বিদ্যানন্দের এই ১০ টাকার হাট সেই সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। এখানে মুসলিম, হিন্দু—সবাই একসঙ্গে উৎসব ভাগাভাগি করছে। আমি এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”
বিদ্যানন্দের বোর্ড ডিরেক্টর জামাল উদ্দিন বলেন, “সারাবিশ্বে ধর্মীয় সম্প্রীতি এখন সংকটে। আমরা উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্বে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই। সাহায্যের ক্ষেত্রে বিদ্যানন্দ সবসময় জাত ও ধর্ম নিরপেক্ষ।”
অংশগ্রহণকারী বালা রানী বলেন, “আমরা ভাবতেই পারিনি দুর্গাপূজার আগে এত আনন্দ আয়োজন হবে আমাদের জন্য। নতুন কাপড় পেয়েছি, মাত্র এক টাকায় সংসারের বাজার করতে পেরেছি। আমরা খুব খুশি।”