তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ সমকামিতা প্রমোটের অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ)। গত ৭ অক্টোবর
ওই শিক্ষকের স্থায়ী অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অভিযোগের তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত চলাকালীন ওই শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর প্রক্ষিতে গত ২৬ অক্টোবর জেএমবিএফ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংগঠনটির সহ-সভাপতি তান্নি বিথি সর্দার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিবৃতি সূত্রে, জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে ২৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমকামিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সকল বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তকে তীব্র নিন্দা জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং একাডেমিক স্বাধীনতার উপর আঘাত। এমন সিদ্ধান্ত বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা ও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে যা মানুষের মর্যাদা ও সমতার নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। জেএমবিএফ অবিলম্বে হাফিজুল ইসলামকে বিরত রাখার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা অন্তর্ভুক্তি, বৈষম্যহীনতা এবং মানবাধিকারের মূল্যবোধ রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। বিশেষত উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, হাফিজুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তটি কিছু প্রো-ইসলামী ছাত্র সংগঠনের চাপে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে, যা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিষ্ঠার পর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।
বিবৃতিসূত্রে আরও বলা হয়, এই ঘটনা একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে এবং এটি মানবাধিকারের মূল নীতির পরিপন্থী যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। এটি এক ধরনের অসহিষ্ণুতার প্রতিফলন যা কোনো একাডেমিক প্রতিষ্ঠান বা গণতান্ত্রিক সমাজে স্থান পাওয়া উচিত নয়। জেএমবিএফ বিশ্বাস করে, হাফিজুল ইসলামকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার এই সিদ্ধান্ত শুধু আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং নৈতিকভাবেও ভুল। এটি ন্যায়বিচার ও সমতার মূলনীতিকে লঙ্ঘন করে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
জেএমবিএফ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলির প্রতি আহ্বান এই ধরনের প্রকাশ্য বৈষম্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য। তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে একাডেমিক স্বাধীনতা এবং LGBTQI+ ব্যক্তিদের অধিকারের সুরক্ষার পক্ষে প্রচার চালাতে এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু পর্যালোচনার নিশ্চয়তা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানায়।
বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জেএমবিএফ এর আহ্বান যে, তারা যেন যৌন প্রবণতার ভিত্তিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাখার নিশ্চয়তা দেয়।
জেএমবিএফ এই পরিস্থিতিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকবে এবং হাফিজুল ইসলাম সহ বাংলাদেশের সমস্ত নিপীড়িত ব্যক্তিদের প্রতি সংহতি ঘোষণা করছে। পরিচয় নির্বিশেষে সকল মানুষের সমতা, ন্যায়বিচার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগঠনটি লড়াই চালিয়ে যাবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশি মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম বলেন, “এই ঘটনা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উপর আক্রমন নয়, বরং বাংলাদেশের স্বপ্নের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার মূল্যবোধের উপর আক্রমণ। একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত শেখার এবং অন্তর্ভুক্তির স্থান, এমন একটি স্থান নয় যেখানে কেউ তার পরিচয় বা ভাবা পার্থক্যের জন্য নিপীড়নের শিকার হয়। আমরা অবিলম্বে হাফিজুল ইসলামের পুনর্বহাল এবং পক্ষপাতহীন, নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করি।”
আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার খুন
ফ্রান্সের LGBTQI+ অধিকারকর্মী ও জেএমবিএফ এর প্রধান পরামর্শক রবার্ট সাইমন এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “কেবলমাত্র যৌন প্রবণতা ধারণার ওপর ভিত্তি করে কোনো শিক্ষকের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা গভীর বৈষম্য এবং অবিচারের প্রকাশ। এটি মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করে। একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বৈচিত্র্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার আশ্রয়স্থল হওয়া উচিত, বৈষম্য ও বৈরিতার স্থান নয়। আমরা এমন বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করতে পারি না।”
প্রসঙ্গত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রী হেনস্তা, সমকামিতা প্রমোট ও শিক্ষার্থীকে পাখার সাথে ঝুলিয়ে মারার হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। গত ৭ অক্টোবর তার স্থায়ী অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অভিযোগের তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত চলাকালীন ওই শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।