
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশে কৃষি প্রধান জীবিকা। দেশের ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল হলেও কৃষি ও কৃষকের প্রকৃত মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার।
চলতি রবি মৌসুমে আলু চাষে আশার আলো দেখেছিলেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা। বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ ও জয়পুরহাটের মতো জেলাগুলোতে আলু উৎপাদন জমজমাট হলেও, দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, এবছর এক বিঘা জমিতে আলু চাষে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। উৎপাদিত আলুর বিক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি মাত্র ১৪-১৬ টাকা হওয়ায় চাষিরা লোকসানের মুখ দেখছেন। অথচ খুচরা বাজারে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার দৌরাত্ম্য চাষিদের ক্ষতির অন্যতম কারণ।
পত্রিকার তথ্যমতে, এবছর উত্তরাঞ্চলে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমি। কিন্তু তা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমি। উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা না হওয়ায় দাম কমে গেছে।
একজন কৃষকের হিসেবে, বিঘাপ্রতি ২০০ কেজি বীজ রোপণ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৪০০ টাকা। উৎপাদিত ১ হাজার ৯৮০ কেজি আলু বিক্রি করে যেখানে ২৯ হাজার ৭০০ টাকা আয় হওয়ার কথা, সেখানে খরচ মেটানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুনঃ দারুল ইহসান ট্রাস্টের বোর্ড সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষকরা যদি তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পান, তবে ভবিষ্যতে তারা আলু চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন। দেশের কৃষি অর্থনীতি সচল রাখতে প্রয়োজন মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং সিন্ডিকেট ভেঙে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সরকারের সুদৃষ্টি এখন সময়ের দাবী। “কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ, গড়বে সোনার বাংলাদেশ।”
লেখকঃ
মো: রবিউস সানি জোহা
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।