
গোকুল চন্দ্র রায়, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের চিত্র এখন চরম আকার ধারণ করেছে। সরজমিনে গত ৫ এপ্রিল দেখা গেছে, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ২১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও মাত্র ৩ জন চিকিৎসকের ওপর ভর করেই চলতে হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম, ভেঙে পড়ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ পুরস্কারপ্রাপ্ত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রসূতি নারীদের স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, যন্ত্রপাতির অভাব এবং জনবল সংকটের কারণে আজও সেখানে সিজারিয়ানের মতো জরুরি অপারেশন চালুর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি।
রোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি দেড় বছর ধরে নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকলেও তা মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর ফলে রোগীদের সঠিক রোগ নির্ণয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওষুধ সরবরাহেও রয়েছে ভয়াবহ ঘাটতি। প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ এতটাই কম যে, রোগীদের অনেক সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে বাইরে যেতে হচ্ছে।
রোগীর চাপও কম নয়। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। জরুরি বিভাগেও প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন ৪০-৫০ জন। এ ছাড়া ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকেন। অথচ চিকিৎসক সংকটে রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে চরম ভোগান্তির।
উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “মোট ৪ জন স্থায়ী চিকিৎসকের মধ্যে একজন ২ মাসের প্রশিক্ষণে রয়েছেন। প্রেষণে সপ্তাহে দু’দিন দু’জন চিকিৎসক এসে সেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসক সংকটে রোগীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব রোগীদের সেবা দিতে।”
আরও পড়ুনঃ “এই সরকার গরিবের সরকার, সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্যই কাজ করছে”
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ৩১টি নার্স পদের সবকটিতেই জনবল থাকলেও ২ জন বর্তমানে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। ওষুধ সরবরাহে ঘাটতির কারণেও কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সচেতন মহল মনে করেন, এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে দ্রুত নতুন চিকিৎসক নিয়োগ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। না হলে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও ভয়াবহ দুর্দশার দিকে ধাবিত হবে।