
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি: রাত পোহালেই নববর্ষ, শুরু হচ্ছে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের উৎসব পহেলা বৈশাখ ঘিরে সারাদেশেই যখন উৎসবের আমেজ, ময়মনসিংহে তখন চলছে অপেক্ষাকৃত সাদামাটা প্রস্তুতি। বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রশাসনের উদ্যোগ কিছুটা সীমিত থাকায় সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজিম উদ্দিন জানান, বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ওই সভায় অংশগ্রহণ করেছে এবং আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে অনেক সংগঠন জানায়, এবারের প্রস্তুতি তেমন গুছানো নয় এবং তাদের সঙ্গে সেভাবে সমন্বয়ও হয়নি।
রবিবার সকালে নতুনবাজারের বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে দেখা যায়, শিল্পীরা পুরোনো মুখোশ, পাখি ও অন্যান্য বৈশাখী অনুষঙ্গ পরিষ্কার করছেন। আয়োজকরা জানান, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় না থাকায় তারা নিজেদের উদ্যোগেই আলাদা আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করছেন। একই চিত্র ছিল মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা আগের বছরের ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জা ঝাড়ু-মুছে প্রস্তুত করলেও, তাদের মধ্যে দেখা গেছে কিছুটা অনীহা ও শঙ্কাও।
তবে ব্যতিক্রম ছিল মাসকান্দার শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন চারুকলা ইনস্টিটিউটে। সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিগত এক সপ্তাহ ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন বৈশাখী মোটিফ ও শিল্পকর্ম প্রস্তুতিতে। প্যাঁচা, মাস্ক, রঙিন চরকি, কাঠের বাঘ, মুগ্ধ বোতল, শান্তির পায়রা— নানা প্রতীক নিয়ে তারা হাজির হচ্ছেন নববর্ষের শোভাযাত্রায়। এবারের মূল বার্তা ‘শান্তির পায়রা’, যা দিয়ে সারাবিশ্বের সংঘাত থেকে মুক্তির আহ্বান জানানো হচ্ছে।
চারুকলার শিক্ষক রেশমা আহমেদ বলেন, “নববর্ষের শোভাযাত্রায় আমরা সব সময় ব্যতিক্রমী কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করি। এবারের প্রতিপাদ্য শান্তির পায়রা— এই প্রতীকটি দিয়ে আমরা বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।”
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সমন্বয়ক ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলা শাখার সহসভাপতি সারওয়ার কামাল রবীন জানান, এবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কোনো সমন্বয় না থাকায় তারা নিজেদের মতো করে শোভাযাত্রার আয়োজন করছেন। সোমবার সকাল ৭টায় কৃষ্ণচূড়া চত্বর থেকে ৩২টি সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে তাদের আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে এবং কাচারিঘাটে গিয়ে শেষ হবে।
আরও পড়ুনঃ রাজশাহীতে শিল্পে ও সাহিত্যে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজিত শোভাযাত্রাটি সকাল ৮টায় মহাবিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে টাউন হল মোড় হয়ে বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হবে, যেখানে আয়োজন করা হয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।
মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম জানান, এবারের মূল আয়োজনে স্কুলটি সরাসরি যুক্ত না থাকলেও জেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণে তারা একটি শোভাযাত্রা অংশ হিসেবে আয়োজন করছেন। প্রয়াত শিক্ষাবিদ আমীর আহমেদ চৌধুরী রতন স্যারের অভাব এবার সবাইকে অনুভব করাচ্ছে।
সবমিলিয়ে এবারের নববর্ষ উদযাপনে ময়মনসিংহে অতীতের তুলনায় কম প্রস্তুতি দেখা গেলেও কিছু সংগঠন নিজস্ব উদ্যোগে উৎসবের রং ধরে রাখার চেষ্টা করছে। শান্তি, ঐতিহ্য আর বাংলার শিকড়ে ফেরার বার্তা নিয়েই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করতে প্রস্তুত ময়মনসিংহবাসী।