
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলার যুবক ইয়াসিন শেখের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। নানা চেষ্টার পরও দেশে সে সুযোগ না পেলেও রাশিয়ায় গিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি। রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেন ইয়াসিন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রেই থেমে যায় তার সেই স্বপ্নের যাত্রা। ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ইয়াসিনসহ তার চার সহযোদ্ধার দেহ।
গত ২৭ মার্চ ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হন ইয়াসিন। তবে তার পরিবারের সদস্যরা এ খবর জানতে পারেন ঈদের পরদিন, ১ এপ্রিল। রাশিয়ায় থাকা ইয়াসিনের বন্ধু মেহেদী তাদের মৃত্যুর খবর জানানোর পর থেকেই পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা গ্রামের মৃত সত্তর মিয়ার ছোট ছেলে ছিলেন ইয়াসিন শেখ। চার ভাইবোনের মধ্যে দুজন আগেই মারা গেছেন। মা ও বড় ভাইকে নিয়ে ছিল তার সংসার। বড় ভাই রুহুল আমিন ব্যবসা করতেন এবং ইয়াসিনের পড়াশোনা ও বিদেশযাত্রার খরচ বহন করতেন।
ইয়াসিন রাশিয়ায় থাকাকালীন সময় থেকেই যুদ্ধের ছবি ও ভিডিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করতেন। গত ১ মার্চ বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি, যেখানে রাশিয়ায় যাওয়া, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এবং স্বপ্নপূরণের কথা উল্লেখ করেন। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, “যুদ্ধে মৃত্যু হলেও আমার কোনো আফসোস থাকবে না।” কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! মাস না পেরুতেই ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত হলেন তিনি।
ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম রবি জানান, রাশিয়ায় যাওয়ার আগে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ান ভাষা শেখেন ইয়াসিন। পরে বন্ধুর সহায়তায় একটি কোম্পানিতে চাকরি পান। তবে তিন মাস কাজ করার পর রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম আরও জানান, “রাশিয়ায় যাওয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর নেয় রাশিয়ায় পাঠানো এজেন্সির লোকজন। ২৬ মার্চ শেষবারের মতো মায়ের সঙ্গে কথা বলে ইয়াসিন। সে জানিয়েছিল, কয়েক দিনের মধ্যেই ১০ লাখ টাকা পাঠাবে।”
আরও পড়ুনঃ সাভারের বিরুলিয়া ব্রীজ ফুড কোর্ট মার্কেটে চাঁদাবাজি, ভাংচুর ও মারপিট: গ্রেফতার ১
কিন্তু এখন পরিবারের সদস্যরা ইয়াসিনের লাশের কী অবস্থা বা তা দেশে আনা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্যই পাচ্ছেন না। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কান্না থামাতে পারছেন না ইয়াসিনের মা। এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ইয়াসিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে গৌরীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা মরিচালি গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নেন।
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজ্জাদুল হাসান জানান, “বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”